খেলাপি ঋণে এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ছয় ব্যাংক!
এ জেড ভূঁইয়া আনাস: করোনার প্রকোপ কেটে গেলেও দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। আর খেলাপি ঋণের কবলে সবচেয়ে বেশি পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ব ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ০৭ শতাংশে আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। জুন শেষে যা ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সুতরাং তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। আর গত নয় মাসে বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি। কারণ গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের মোট ৬০টি ব্যাংকের ঋণ পরিসংখ্যান নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেখানে ব্যাংকগুলোর সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্যাংকগুলোর খেলাপি অর্থাৎ শ্রেণিকৃত করা হয়েছে এক লাখ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল-এর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সেপ্টেম্বর শেষে দুই লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪৪ হাজার ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ।
আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৩৪১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যার খেলাপির পরিমাণ তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে খেলাপির হার ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সব ব্যাংককেই খেলাপির হার বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত নয় মাসে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর দিক থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ে সেই রকম কোন প্রয়াস নেই। তারা নানারকম ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত। কিছু কিছু ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। সেখানে তারা এক্সপোজার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের আসল যে কাজ, বিতরণকৃত ঋণগুলো উদ্ধারে তৎপর হওয়া সে বিষয়ে তাদের কোন খেয়াল নেই। বিশেষ করে, পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্টের যারা আছেন তারা এ বিষয়ে সিরিয়াস না।
এই ঋণগুলো আদায়ে কি রকম পদক্ষেপ নিতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই গভর্নর বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে তেমন কোন তাগিদ দেওয়া হচ্ছে না। তারা ঢালাওভাবে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায় করতে বলছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হলে ব্যাংকওয়ারি টার্গেট দিয়ে দিতে হবে। যাদের খেলাপির পরিমাণ বেশি তাদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট পরিমাণ বেঁধে দিলে খেলাপির পরিমাণ কমে আসবে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সেপ্টেম্বর শেষে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। খেলাপির হার পাঁচ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া বিদেশী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ২৬১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। খেলাপির হার চার দশমিক ১২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ২৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ওই সময়ে খেলাপির হার ছিল আট দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বর শেষে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।