আশরাফ টেক্সটাইলকে জমি বিক্রির ৭৫ কোটি টাকার তথ্য চেয়ে তলব
আতাউর রহমান: শেয়ারবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আশরাফ টেক্সটাইল মিলসের ৩২.৮২ বিঘা জমি বিক্রির ৭৫ কোটি টাকা ব্যবহারের তথ্য জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেইসঙ্গে কোম্পানিটির পর্ষদকে উল্লেখখিত বিষয়ের নথিপত্র ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ সশরীরে ব্যক্তিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনিগত পদক্ষেপ গ্রহণের হুশিয়ারি দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি একটি বিশেষ এজেন্ডা গৃহীত হওয়ার জন্য আশরাফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ পরিচালনা পর্ষদ সভার আয়োজন করে। ওই পর্ষদ সভার ঠিক পরেই অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) কোম্পানিটির জমির উন্নয়ন বা জমি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত সমাধান করে অনুমোদিত হয়। এছাড়াও সভায় টঙ্গী, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলার যেকোনো উপযুক্ত স্থানে কোম্পানিটির কারখানা স্থানান্তর করা হবে সিদ্ধান্ত হয় এবং তা অনুমোদিত হয়। কিন্তু ইজিএম পরিচালনা এবং কোম্পানির জমি ও ভবনের নিষ্পত্তির বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো প্রকার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দেওয়া হয়নি। ফলে কোম্পানিটি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের এ বিষয়ে অন্ধকারে রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ওই সময় ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) একটি প্রধান শেয়ারহোল্ডার হওয়ায় পরেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোম্পানিটির উক্ত এজেন্ডার পক্ষে ভোট দিয়েছে। একইসঙ্গে ওই পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের বিষয়বস্তু, ১ হাজার ৩৬২ জন শেয়ারহোল্ডাদের দ্বারা অনুমোদিত এজেন্ডা, কোম্পানিটির ভবন ও জমি, জমিটির ক্রেতা এবং জমি কেনাবেচা নিষ্পত্তির তথ্য ইজিএমে স্পষ্ট করা হয়নি। এজিএমে শুধু জমি বিক্রয় মূল্য এবং বিক্রিত আয়ের ব্যবহার এবং জমি নিবন্ধনের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।
এদিকে স্থায়ী সম্পদ (জমি এবং ফ্লোর স্পেস) বিক্রির বিপরীতে ৭৫ কোটি টাকার বিক্রয় আয়ের ব্যবহার সম্পর্কে কমিশন জানতে চাওয়ার পরও কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কোনো সহায়ক নথি জমা দেওয়া হয়নি।
এরই ধরাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১১(২) এর অধীনে কোম্পানিকে উল্লেখখিত নথি, অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র এবং ব্যক্তিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। আর এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে কোম্পানিটিকে বিডিবিএল (পূর্বে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা নামে পরিচিত) এবং রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে দায় নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকের পরামর্শের অনুলিপি, ঋণ চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে সর্বশেষ বকেয়া পরিমাণ উল্লিখিত ব্যাংক স্টেটমেন্টের অনুলিপি, করিম ট্রেডিংয়ের সঙ্গে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৭ টাকার দায়বদ্ধতা ও দায় নিষ্পত্তি সংক্রান্ত সহায়ক নথি, ৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শ্রমিক ও কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটি প্রদান সংক্রান্ত সহায়ক নথি এবং অন্যান্য খরচের ও পরিশোধ সংক্রান্ত সহায়ক নথি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।