আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ অগাস্ট ২০২২, বুধবার |

kidarkar

৩ মাসে সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম বেড়ে আড়াই গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঢাকা : শেয়ারবাজারে মন্দাভাব চললেও টানা বাড়ছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। সার্বিকভাবে বাজারে যেখানে মন্দাভাব, সেখানে কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে সোনারগাঁও টেক্সটাইলের। এ কারণে বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ উত্থানের পেছনে কারসাজিই প্রধান কারণ।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ মে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। একটানা মূল্যবৃদ্ধির পর গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ টাকা ১০ পয়সায়। সেই হিসাবে তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সাড়ে ৪৫ টাকা বা ১৪০ শতাংশ বেড়েছে। অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে গত জুলাইয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে কোম্পানিটিকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির জবাবে ৫ জুলাই কোম্পানিটি জানায়, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেতে পারে এমন কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানে না কোম্পানিটি।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত একটি কোম্পানি। ২০১৯ সালের পর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে দীর্ঘ সময় কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে কোম্পানিটির মুনাফা ও আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে যায়। তাতে গত বছরের শেষভাগে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম নেমে আসে ১৫-১৬ টাকায়। গত জানুয়ারি থেকে এটির দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। পাশাপাশি কোম্পানিটির আয় ও মুনাফা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।

বিএসইসি ও ডিএসই সূত্রে জানা যায়, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে উৎপাদনে ফিরলেও পূর্ণ মাত্রায় এটির উৎপাদন এখনো শুরু হয়নি। আবার কোম্পানিটি বরিশালে অবস্থিত হওয়ায় এটি চলে মূলত বিদ্যুতে। ফলে বস্ত্র খাতের গ্যাসনির্ভর কারখানার তুলনায় সোনারগাঁও টেক্সটাইলের উৎপাদন খরচ বেশি। তা সত্ত্বেও বাজারে এটির দাম বাড়ছে হু হু করে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৪-এ। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলেন, যে কোম্পানির পিই রেশি যত বেশি, সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব আসাদুল্লাহ মাহমুদ বলেন, ‘শেয়ারবাজারে কেন কোম্পানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্যও নেই।’

বাজারসংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালের পর থেকে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এ বছর লভ্যাংশ না দিলে এটি নিয়ম অনুযায়ী ‘বি’ শ্রেণি থেকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হবে। এ অবস্থায় চলতি বছর ভালো লভ্যাংশ দেবে—এমন গুজব ছড়িয়ে একটি চক্র কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে।

এদিকে ১৯৯৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২ কোটি ৬৪ লাখ শেয়ারে বিভক্ত। কোম্পানিটির শেয়ারের সাড়ে ৪৪ শতাংশই রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫৪ শতাংশ শেয়ার। স্বল্প মূলধনি কোম্পানি হওয়ায় কারসাজির মাধ্যমে এটির দাম বাড়ানো সহজ বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

১ টি মতামত “৩ মাসে সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম বেড়ে আড়াই গুণ”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.