আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

বন্যাকবলিত পাকিস্তানে দ্রুত ছড়াচ্ছে ম্যালেরিয়াসহ অন্যান্য রোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের বন্যা-কবলিত অঞ্চলে ম্যালেরিয়াসহ অন্যান্য রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যেই এসব রোগের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৩২৪ জনে পৌঁছেছে বলে বুধবার জানিয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বলেছেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় তিনি অনেক লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও যদি আরও সাহায্য না আসে তাহলে এসব মানুষ বিপদের মধ্যেই থেকে যাবেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। চলমান এই বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক মানুষ খোলা জায়গায় বসবাস করছেন। বন্যার পানি এখনও স্থির রয়েছে এবং তা শত শত কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।

এখনও যে পরিমাণ পানি রয়েছে তা কমতে কার্যত দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে বন্যাদুর্গত বহু মানুষের মধ্যে ত্বক এবং চোখের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড এবং ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করতে পাকিস্তান সফরে যান বিখ্যাত হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। মূলত বন্যা-দুর্গত মানুষের সহায়তায় এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াসে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আইআরসি-এর সঙ্গে বন্যায় বাস্তুচ্যুত লোকদের সাথে দেখা করেন তিনি।

এছাড়া পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধ প্রদেশে বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কিছু এলাকাও ঘুরে দেখেছেন তিনি। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বলছেন, বন্যায় যারা রক্ষা পেয়েছেন আমি তাদের (মানবেতর) জীবনযাপন দেখেছি। এসব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সাহায্য দরকার এবং এটি ছাড়া কয়েক সপ্তাহ পর তারা এখানে থাকতেই পারবেন না।

পাকিস্তানের বন্যা প্রতিক্রিয়া কেন্দ্র পরিদর্শন করার সময় বুধবার এসব কথা বলেন জোলি। জোলির এসব মন্তব্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনী শেয়ার করা একটি ভিডিও ফুটেজে সামনে এসেছে।

রয়টার্স বলছে, বন্যায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা প্রয়োজন বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এবং সাহায্য কর্মীরা বলেছেন। খোলা জায়গায় বসবাসের কারণে বন্যাদুর্গত এসব মানুষ মশার বিরুদ্ধে লড়ছেন এবং সাপ ও কুকুরের কামড়ের শিকার হওয়ার মতো অন্যান্য বিপদও তাদের সামনে রয়েছে।এছাড়া সরকার এবং দেশি-বিদেশি ত্রাণ সংস্থার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে অনেক লোকের খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা সহায়তা এবং ওষুধের তীব্র প্রয়োজন রয়েছে।

দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং দুর্গত মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা না দিতে পারার কারণে বন্যায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো অনিরাপদ পানি পান করতে এবং সেগুলো ব্যবহার করে রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দক্ষিণ পাকিস্তানে বন্যায় নিজের ভেসে যাওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গোলাম রসুল নামে এক পাকিস্তানি স্থানীয় জিও নিউজ টিভিকে বলেন, ‘আমরা জানি এটি (অনিরাপদ পানি পান) আমাদের অসুস্থ করে দিতে পারে, কিন্তু কী করব? বেঁচে থাকার জন্য আমাদের এই পানিই পান করতে হচ্ছে।’

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঐতিহাসিক এবং প্রবল বর্ষার ফলে পাকিস্তানে গত তিন দশকের গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে এবার প্রায় তিনগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমবাহ গলে যাওয়া। আর এতেই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে চলতি বছর অভূতপূর্ব বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বন্যার তীব্রতা আরও বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ২২ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটির প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চলমান ভয়াবহ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাকিস্তানজুড়ে বহু এলাকার বাড়িঘর, ফসল, সেতু, রাস্তা এবং গবাদিপশু ভেসে গেছে। এতে করে পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ইতোপূর্বে ২০১০ সালের বন্যা এবং ২০০৫ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে পাকিস্তান সফর করেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তবে সর্বশেষ এই সফর সম্পর্কে হলিউডের বিখ্যাত এই অভিনেত্রী বলছেন, ‘আমি এরকম কিছু কখনও দেখিনি… আমি অভিভূত হয়ে গেছি।’

এদিকে পানিতে নিমজ্জিত বেশ কয়েকটি অঞ্চল পরিদর্শন করার পর পাকিস্তানে মার্সি কর্পসের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ফারাহ নওরীন বলছেন, পাকিস্তানে সাহায্য পৌঁছাচ্ছে ধীরগতিতে। বিশুদ্ধ খাবার পানীয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে গত সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দুর্গত মানুষের প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে মেটাতে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বর্তমানে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বন্যার ত্রাণ সরবরাহ এবং অন্যান্য রসদ সংগ্রহের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার জন্য ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করেছে তারা। এছাড়া চলতি বছর পাকিস্তানের বন্যা-কবলিত এলাকায় জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে ফ্রান্স।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এই ঘোষণা এসেছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.