সক্ষমতা ফেরাতে ইমাম বাটনে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটনে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির কারখানায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ আছে। ১২ বছর ধরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এমনকি গত ৪ বছর ধরে বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) করছে না ওই কোম্পানি। তাই, কোম্পানিটির সক্ষমতা ফেরাতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র পরিচালকদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি।
এছাড়া, বিষয়টি কোম্পানির পর্ষদের শেয়ারহোল্ডার, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), সেক্রেটারিসহ ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন—মাহমুদ সবুজ অ্যান্ড কোং এর ব্যাবস্থাপনা অংশীদার ও আইসিএবি’র কাউন্সিল মেম্বার মো. মাহমুদুল হোসেইন এবং ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের অধ্যাপক ও ডিন মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তালিকাভুক্ত কোম্পানি, যা ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানি ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি এবং ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। কোম্পানিটি ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ আর্থিক বছরে কমিশনে নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (তালিকাকরণ) প্রবিধান-২০১৫ এর ১৭ এবং ১৮ নং ধারা লঙ্ঘন করেছে।
অপরদিকে, কোম্পানিটিকে ২০১১ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থাপনের প্রথম দিন থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তার পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাই, গত ২৪ আগস্ট বিএসইসি ও ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে দুজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তাই, কমিশন ২০২১ সালের ২২ মার্চের নির্দেশনার অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোম্পানিতে দুই ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করে। তাদের তথ্য চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ আলী ইমাম বাটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চট্টগ্রামভিত্তিক ইমাম গ্রুপের মালিক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৮০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ৫৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।
এদিকে, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে বিএসইসি আইনি পদক্ষেপ নিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদ আলী ইমামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল। পরে ২২ ডিসেম্বর মোহাম্মদ আলী ইমাম হঠাৎ ঘোষণা করেন যে, তিনি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানির ৬৫ হাজার শেয়ার কিনবেন। খবরটি প্রকাশের পর, ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম সেদিন ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু, ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি তার ঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার কিনেননি।
মোহাম্মদ আলী একসময় ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। পরে তাকে এনসিসি বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ, ব্যাংকে তার শেয়ার ২ শতাংশের নিচে নেমে যায় এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ খেলাপি হয়ে যায়।
ইমাম বাটন ২০১১ সাল থেকে লোকসান করে আসছে। বর্তমানে ডিএসইতে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি হিসেবে আছে। কোম্পানিটি ১৯৯৬ সালে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের কাছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কাছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার আছে।