আজ: শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ইং, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার |

kidarkar

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৫ ইউনিট মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে: যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৫টি ইউনিট মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের বাইরে ইসরায়েলি সেনাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনা ঘটেছে এবং এর সবগুলোই ঘটেছে গাজায় চলমান যুদ্ধের আগে।

এদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও মার্কিন সামরিক সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথক ঘটনায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী বলে প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে তারা বলেছে, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে মার্কিন সামরিক সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই সমস্ত ঘটনা বর্তমান যুদ্ধের আগে গাজার বাইরে সংঘটিত হয়েছিল।

ইসরায়েল চারটি ইউনিটে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পঞ্চমটির বিষয়ে ‘অতিরিক্ত তথ্য’ দিয়েছে বলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে। এর অর্থ হচ্ছে- সমস্ত ইউনিটই মার্কিন সামরিক সহায়তা পাওয়ার জন্য যোগ্য থাকবে।

ইসরায়েলের প্রধান সামরিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি প্রতি বছর ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করে থাকে।

বিবিসি বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কোনও ইউনিটের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের এই ধরনের ঘোষণা এটিই প্রথম। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছে।

তিনি বলেছেন, ‘এই ইউনিটগুলোর মধ্যে চারটি কার্যকরভাবে এই লঙ্ঘনের প্রতিকার করেছে, যা আমরা অংশীদারদের কাছ থেকে আশা করি। বাকি একটি ইউনিটের বিষয়ে আমরা ইসরায়েল সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি; তারা সেই ইউনিটের সাথে সম্পর্কিত অতিরিক্ত তথ্য জমা দিয়েছে।’

অবশ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনায় কোনো জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে কি না তা বলতে না পারলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এসব ইউনিটে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা তথা রাজনৈতিক চাপে (কঠোর অবস্থান নেওয়া থেকে) যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে গেছে বলে ওঠা দাবিকে অস্বীকার করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ।

বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, ‘আমরা এখন একটি প্রক্রিয়ায় তাদের সাথে জড়িত আছি, এবং যখন সেই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হবে তখন আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

বিবিসি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন সরকার বলেছে, তারা নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং ধর্ষণকে এই ধরনের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হলেও অভিযুক্ত ইউনিটগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে দ্বিচারিতা আছে কিনা জানতে চাইলে প্যাটেল বলেন, ইসরায়েলকে ‘বিশেষ সুবিধা’ বা নীতি নিয়ে ‘দ্বিচারিতা’ বলে কিছু নেই এবং তাদের এসব স্ট্যান্ডার্ড ‘সমস্ত দেশে সমানভাবে’ প্রয়োগ করা হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে বলে ইতোমধ্যেই পররষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে জানিয়েছেন কিছু ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি অভ্যন্তরীণ মেমো পর্যালোচনা করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে ব্যবহার করার বিষয়ে যে আশ্বাস ইসরায়েল দিয়েছে, সেটিকে ‘বিশ্বাসযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য’ বলে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে কিছু ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে জানিয়েছেন।

মূলত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারক (এনএসএম) জারি করেছিলেন। স্মারকটি অনুসারে, মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন না করার বিষয়ে তেল আবিবের আশ্বাস সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে কিনা তা আগামী ৮ মের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে কংগ্রেসে রিপোর্ট করতে হবে।

তবে গত ২৪ মার্চের মধ্যে অন্তত সাতটি স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্যুরো ব্লিংকেনকে প্রাথমিক ‘মেমো’-তে তাদের মতামত পাঠিয়েছিল। এসব মেমোর বিষয়ে আগে রিপোর্ট করা হয়নি এবং এর অংশগুলোও ছিল গোপনীয়।

ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে কিনা তা নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত বিভক্তির সবচেয়ে বিস্তৃত চিত্র পাওয়া গেছে এসব মেমোতে। চারটি ব্যুরো – গণতন্ত্র মানবাধিকার ও শ্রম; জনসংখ্যা, উদ্বাস্তু এবং অভিবাসন; গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস; এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যাফেয়ার্স – থেকে জমা দেওয়া যৌথ মেমোতে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানের সময় আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ‘মেনে চলার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ’ সামনে এনেছে।

এই চারটি ব্যুরোর মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আশ্বাস ‘বিশ্বাসযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য নয়’। তারা ওই মূল্যায়নে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের আটটি উদাহরণ উদ্ধৃত করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘন সম্পর্কে এসব কর্মকাণ্ড ‘গুরুতর প্রশ্ন’ উত্থাপন করেছে।

বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, ইসরায়েল গত মাসে স্টেট ডিপার্টমেন্টে লিখিত আশ্বাস জমা দিয়েছে, কিন্তু মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছে, এই আশ্বাসগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং ইসরায়েলে অস্ত্র হস্তান্তর স্থগিত করার জন্য মার্কিন সরকারকে অনুরোধ করেছে তারা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.