আন্তর্জাতিক আদালতের রায়: নাইকোকে ২৭৫ কোটি দিতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাবদ কানাডীয় কোম্পানি নাইকোকে ২৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধ করতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত (ইকসিড)। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার আপিল শুনানি শেষে গত ২৬ মে পূর্বের আদেশই বহাল রেখেছে ইকসিড। ইকসিডের রায়ের ভিত্তিতে গত সোমবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে নাইকো রিসোর্সেস লিমিটেড।
তবে, এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেনি ইকসিড। নাইকোর বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বাবদ নাইকোকে দেশী ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ২৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দিতে হবে পেট্রোবাংলাকে। এর মধ্যে ১৯৫ কোটি টাকা ডলারে ও বাকি ১৪ কোটি টাকা বাংলাদেশী মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। ওই অর্থের সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত সুদ বাবদ ৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ডলারে এবং ৫ কোটি টাকা বাংলাদেশী মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে।
এছাড়া ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ের জন্য লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) চেয়ে ২ শতাংশ অধিক হারে ডলারে ও ৫ শতাংশ হারে বাংলাদেশী টাকায় সুদ পরিশোধ করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পাওনা পরিশোধ করতে রায়ে বলে দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশী আদালতের পাল্টা কোনো আদেশ গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে, পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে পেট্রোবাংলা ও নাইকো বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের আদেশ বহাল থাকবে।
প্রসঙ্গত, সরকার টেংরাটিলা, ফেনী ও কামতা গ্যাসক্ষেত্রকে ‘প্রান্তিক’ দেখিয়ে সেখান থেকে গ্যাস তোলার জন্য ১৯৯৯ সালে নাইকো-বাপেক্স যৌথ উদ্যোগের চুক্তি করেছিল। কিন্তু নাইকোর অদক্ষ কূপ খনন প্রক্রিয়ার কারণে ২০০৫ সালে দুবার (৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন) সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই গ্যাসক্ষেত্র ও সন্নিহিত এলাকায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এ ঘটনার পর নাইকোর বিরুদ্ধে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে ২০০৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় জেলা জজ আদালতে মামলা করে পেট্রোবাংলা। সে সঙ্গে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ বাবদ পাওনা আটকে দেয় পেট্রোবাংলা।
এদিকে টেংরাটিলায় বিস্ফোরণে ক্ষতিপূরণ থেকে রেহাই এবং ফেনী ক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম চেয়ে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল একটি এবং ১৬ জুন ইকসিডে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে পাল্টা দুটি মামলা করে নাইকো। ওই মামলার দ্বিতীয় রায়ে ২০১৪ সালে ১১ সেপ্টেম্বর ইকসিড নাইকোর গ্যাসের দাম পরিশোধ-সংক্রান্ত মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। পরে তা চ্যালেঞ্জ করে আপিল করে পেট্রোবাংলা। যাতে গত ২৬ মে তৃতীয় রায়ে পেট্রোবাংলাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেয় ইকসিড। ইকসিডে পেট্রোবাংলার পক্ষে তখন মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ।
বর্তমানে মামলাটি পরিচালনা করছেন মার্কিন আইনি সংস্থা ‘ফলি হক’। এদিকে গত ২৫ মার্চ আগের অভিযোগ বাতিল এবং প্রায় সোয়া ৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে নাইকোর বিরুদ্ধে ইকসিডে মামলা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ