বাংলাদেশ-চীন ২৭ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই: কি কি থাকছে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ব্যবসা-বাণিজ্য, জঙ্গিবাদ, সমুদ্র সহযোগিতা, কর্ণফুলি টানেল নির্মাণসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। এর মধ্যে ৬ প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ নিয়ে বিফ্রিং দেন। তিনি বলেন, ১৫টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়েছে সরকার টু সরকার পর্যায়ে। যার ১২টি লোন এগ্রিমেন্ট ও মিউচুয়াল এগ্রিমেন্ট। মোট সাতাশটি।
কী কী বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হয়েছে জানতে চাইলে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, মেরিটাইম খাতে সই হয়েছে। এছাড়া ইকোনোমিক ও টেকনিক্যাল কো-অপারেশন ও একটা ফ্রেইম ওর্য়াক হয়েছে রোড অ্যান্ড টানেল এবং সুয়ারেস টার্মিনাল ব্যাপারে একটা এগ্রিমেন্ট হয়েছে।
জঙ্গিবাদ বিষয়ে একটা চুক্তি সই হয়েছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মত। এক মত হয়েছেন দুই নেতা। বিশেষ করে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, তথ্য বিনিময়, একচেঞ্জ অব গুড প্র্যাকটিজ এবং একটা সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও চায়নার রিলেশনটা বিশেষ করে ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে একটা লম্বা ইতিহাসের। নতুন কিছু ক্ষেত্রও এখানে আবিষ্কার হয়েছে। বিশেষ করে আইসিটি ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আইসিটি খাতে একটা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ হবে, একই সঙ্গে ট্রাডিশনাল যে খাতগুলো ছিল- কৃষি, বাণিজ্য ও অন্যান্য খাত, সেগুলোতেও আরও গভীর ও সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান শহীদুল হক।
চীনের ব্যবসায়ীরা আরএমজি ও পাট সেক্টরে বিশেষ বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানান সচিব।
শহীদুল হক বলেন, প্রোডাকশন ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট হয়েছে। এই কাঠামোগত চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে যে উৎপাদন ক্ষমতা, সেটি বাড়ানোর জন্য চাইনিজরা প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন এনটিটি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আজ উদ্বোধন হলো ৬ প্রকল্প। প্রকল্পগুলো হলো ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন, ২. কর্ণফুলী নদীর নিচে একাধিক লেনের টানেল নির্মাণ, ৩. পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, ৪. চার স্তরের জাতীয় তথ্যভান্ডার, ৫. চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ৬. শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণ প্রকল্প।
চুক্তি-সমঝোতা স্মারক
সফরে উল্লেখযোগ্য সমঝোতা স্মারকগুলো হলো ১. দুর্যোগ মোকাবিলা ও হ্রাসকরণ, ২. সেতু নির্মাণ, ৩. বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা, ৪. বাংলাদেশ-চীন মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই, ৫. সামুদ্রিক সহযোগিতা, ৬. দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, ৭. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, ৮. জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহযোগিতা, ৯. ইনফরমেশন সিল্ক রোড, ১০. তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সহযোগিতা এবং ১১. সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সহযোগিতা।
সই হওয়া দুটি রূপরেখা চুক্তি হলো কর্ণফুলী নদীর নিচে একাধিক লেনের টানেল নির্মাণ ও দাশেরকান্দিতে সাগরকেন্দ্রিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এ দুটি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চারটি পৃথক ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
এ ছাড়া উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা চুক্তিও সই হয়েছে।
সফরের সময় চারটি অর্থনৈতিক চুক্তি সই হয়েছে। এগুলো হলো পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, চীনের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে প্রশস্তকরণ প্রকল্প, ব্রডকাস্টিং লাইসেন্স প্রটোকল চুক্তি। এ ছাড়া দ্বিস্তরের পাইপলাইন-সমৃদ্ধ পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা এবং ডিপিডিসি এলাকা ও পাঁচটি টেলিভিশন স্টেশনের মধ্যে পাওয়ার সিস্টেম বর্ধিতকরণ চুক্তি।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর