আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ জানুয়ারী ২০১৭, সোমবার |

kidarkar

‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট’ প্রজেক্ট এর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ১ মার্চ

imagesশেয়ারবাজার ডেস্ক: বীমা খাতের উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের বড় অংকের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের বীমা খাত ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার পরিমাণ হবে ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় (৭৯ টাকা বিনিময় হারে) যার পরিমাণ হয় প্রায় ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি মাসেই এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র। আর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ছয় বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ১ মার্চ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইআরডির মাধ্যমে দেশের বীমা খাত নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সঙ্গে এ সহায়তার চুক্তি করবে বিশ্বব্যাংক। আইডিআরএ এ খাতের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ হবে চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

জানা গেছে, বীমা খাতের উন্নয়নে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়ে গত ৩ নভেম্বর ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বরাবর বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান একটি চিঠি দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ এবং বাংলাদেশ বীমা একাডেমির পরিচালক আহমেদুর রহিমকে ওই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সরকার এরই মধ্যে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বা ‘বাংলাদেশের বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে প্রকল্পটির খসড়া তৈরি করেছে। খসড়াটি নিয়ে শিগগিরই সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সংযোজন-বিয়োজন করা হতে পারে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটির উদাহরণ টেনে চিমিয়াও ফান চিঠিতে ইআরডি সচিবকে লিখেছেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বীমা করপোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং সারা দেশে বীমা গ্রাহক বৃদ্ধি।’

বাংলাদেশ বীমা একাডেমির সক্ষমতা ও দক্ষতার মান উন্নয়ন এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশনের আধুনিকীকরণ ও শক্তিশালীকরণের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ আইডিআরএ গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল অনিয়ম-দুর্নীতি-অদক্ষতা দূর করে বীমা খাতের উন্নয়ন করা। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের ছয় বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রবিধানই চূড়ান্ত করতে পারেনি আইডিআরএ। বিনিয়োগ নীতিমালা, সলভেন্সি মার্জিন, ইসলামী বীমা কোম্পানির জন্য পৃথক নীতিমালাসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু প্রবিধানের খসড়া তৈরি হলেও তা চূড়ান্ত হয়নি। ২০১১ আইডিআরএ গঠন হওয়ার পর সংস্থাটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন দেশের প্রথম অ্যাকচুয়ারি এম শেফাক আহমেদ। দ্বিতীয় মেয়াদেও দায়িত্ব পান তিনি, যার সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী বছরের এপ্রিলে। এরই মধ্যে কয়েক দফা চিঠি চালাচালির মধ্য দিয়ে গত বছরের শুরুতে আইডিআরএর জনবল নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে এ অনুমোদনের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তার বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে ভাড়া করা (চুক্তিভিত্তিক) লোকবল দিয়েই চলছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আইডিআরএ গঠনের পর থেকেই সেখানে এ অবস্থা বিরাজ করছে। জনবল সংকটে থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি পুরোদমে কাজ করতে পারছে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান  বলেন, দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা বাড়লেও খাতটির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি কখনই। বহু বছর ধরেই খাতটি উপেক্ষিত। এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও দুই করপোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। খাতটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা আমাদের কাম্য।

এদিকে সাধারণ বীমা করপোরেশনকে পুনর্বীমা খাতে আয় করা নিজের মুনাফার অর্ধেকই দিয়ে দিতে হচ্ছে দেশের বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে। এছাড়া বীমা খাতের ব্যবস্থাপনা নেতৃত্বের পরিবর্তে প্রশাসনের লোকের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ায় ভালো আয় করতে পারছে না জীবন বীমা করপোরেশন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) আদলে বাংলাদেশ বীমা একাডেমিকে গড়ে তোলার জন্য আইডিআরএর প্রস্তাব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ঝুলছে চার বছর ধরে।

বীমা খাতের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, বীমা খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক বড় অংকের ঋণ দিচ্ছে। তবে ঋণের এ অর্থ যেন সঠিকভাবে ব্যবহূত হয়, সে বিষয়ও নিশ্চিত করা জরুরি।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশনসহ দেশে মোট ৭৭টি বীমা কোম্পানি রয়েছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/মা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.