নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাজার: লেনদেন বেড়েছে ২৫.৭৫ শতাংশ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজার বর্তমানে একটি গোছালো অবস্থানে রয়েছে। বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা থাকায় দৈনিক লেনদেন, বাজার মূলধন ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে সূচকেও পড়ছে ইতিবাচক প্রভাব। এমনকি বাজারের প্রতি সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং নীতিনির্ধারণীমহলের তৎপরতা অনেকটাই আস্থায় ফিরে আসছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। আর এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারে তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখছেন। বাজারে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই সূচক ৬ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করবে বলে জানান বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বাজার সম্পর্কে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে.এ.এম. মাজেদুর রহমান জানান, দেশের পুঁজিবাজার তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সব সময় যৌক্তিক, গতিশীল ও স্থায়ী বাজার গড়ে তুলতে কাজ করছে ডিএসই। তবে এই বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া ভালো বাজারের পূর্বশর্ত হচ্ছে সচেতন বিনিয়োগকারী। টেকসই ও উন্নত পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের আইন পরিপালন করতে হবে।
এছাড়া ডিএসই‘র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মনে করছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পুঁজিবাজার বড় অবদান রাখতে পারে। যার ফলে বাজারের প্রতি তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। সূচক ও লেনদেন বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার হাত–বদল করছেন। যার ফলে বাজারের লেনদেন ও সূচক উভয়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণ: সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক উর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ১ দিন কারেকশন হলেও বাকি ৪ কার্যদিবসই বেড়েছে সূচক। বিদায়ী সপ্তাহে সূচক ও লেনদেনর পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। এমনকি ডিএসইতে গড় লেনদেনও বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার ৬৩৫ টাকা। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর লেনদেন বেড়েছে ২৫.৭৫ শতাংশ।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহিক ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৯১.১৯ পয়েন্ট বা ৩.৫৮ শতাংশ বেড়েছে। আর ডিএসইএক্স শরিয়াহ সূচক বেড়েছে ৩২.৫৪ পয়েন্ট বা ২.৬২ শতাংশ ও ডিএসই ৩০ সূচক বেড়েছে ৭৩.২০ পয়েন্ট বা ৩.৮৩ শতাংশ। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৩১টি কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২০৩টি, কমেছে ১১৭টি, অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টি এবং লেনদেন হয়নি ২টি কোম্পানি ও ফান্ডের। এগুলোর উপর ভর করে মোট ৮ হাজার ৯৭৮ কোটি ৬৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩৯ টাকা লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহে হয়েছিলো ৭ হাজার ১৪০ কোটি ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৭ টাকা লেনদেন হয়েছে। সে হিসেবে আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমান বেড়েছে ২৫.৭৫ শতাংশ।
আর দৈনিক গড় হিসাবে এ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার ৩০৮ টাকা। যা আগের সপ্তাহে মোট ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৫ টাকা লেনদেন হয়েছিল। এদিকে, মোট লেনদেনের ৯৫.২৫ শতাংশ এ ক্যাটাগরিভুক্ত, ২.০৪ শতাংশ বি ক্যাটাগরিভুক্ত, ০.৪৪ শতাংশ এন ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ১.২৭ শতাংশ জেড ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে হয়েছে।
এদিকে, দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসইএক্স বেড়েছে ৩৩৭.০২ পয়েন্ট বা ৩.৩৮ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ২৯৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৮টির, কমেছে ৯৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির। আর সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৩৩ কোটি ১৩ লাখ ৫১ হাজার ১৬০ টাকার শেয়ার। যা আগের সপ্তাহ শেষে হয়েছিলো ৪১৭ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৭ টাকার শেয়ার। সে হিসেবে আগের সপ্তাহের তুলনায় সিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমান বেড়েছে ২৭.৬৫ শতাংশ।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর