এমডিকে গ্রেপ্তারের ব্যাখ্যা দিল কেয়া গ্রুপ: চেয়ারম্যান-পরিচালকের জামিন
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: অর্থ আত্মসাৎয়ের অভিযোগে সম্প্রতি কেয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেক পাঠানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে আজ গনমাধ্যমে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এদিকে কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান খালেদা পারভীন ও পরিচালক মাসুম পাঠান হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন লাভ করেছেন বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কেয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, কেয়া গ্রুপ একটি স্বনামধন্য গ্রুপ যা অত্যন্ত সুনামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এখানে ১০ হাজারের অধিক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছে যার মধ্যে এক হাজার প্রতিবন্ধী শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা রয়েছে। কেয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাওরান বাজার শাখা থেকে এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করেছে।
বিগত ২৬/০৯/২০১৬ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাভার, কাওরান বাজার এবং বনানী শাখার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঋণের নামে ৬৪৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং রপ্তানির নামে রপ্তানি বিল ক্রয়ের মাধ্যমে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৮১০ মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৪/১০/২০১৬ তারিখে শুনানীর জন্য আব্দুল খালেক পাঠান,ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৪/১০/২০১৬ তারিখে দুদক অফিসে উপস্থিত হয়ে তাদের উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং ৩১/১০/২০১৬ তারিখে তাদের দাবি অনুযায়ী সকল এলসির ফটোকপি, কাঁচামাল আমদানি বিল অব এন্ট্রির ফটোকপি, কৃষি ব্যাংকে প্রেরিত বিভিন্ন পত্রের ফটোকপি এবং কোম্পানির মেমোরেন্ডাম এর কপি পত্রের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। উক্ত কাগজপত্র প্রদান করার পরে দুদক অদ্যাবদি কোনো কিছু অবহিত করেন নাই এবং গত ২০/০৮/২০১৭ তারিখে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেক পাঠানকে দুদকের তদন্তে সহায়তা করার জন্য উপস্থিত হতে বলেন এবং যার প্রেক্ষিতে গত ২০/০৮/২০১৭ তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপস্থিত হলে দায়েরকৃত কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে তথা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তেজগাও থানার মামলা নং: ৩১/২০১৭ তারিখ ২০/০৮/২০১৭ ইং এর আওতায় ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা অর্থ আত্মসাৎয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাওরান বাজার শাখার নিকট বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী ১৩৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার দায়বদ্ধ। কৃষি ব্যাংকের ঋণটি কয়েকটি ব্যাংকের সাথে নির্দিষ্ট জামানতের বিপরীতে পারিপাস্যু ছিল। যাতে ঋণটি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। উক্ত টাকা পুন:তফসিল করার জন্য ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়ে একাধিকবার আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার-০৪ অনুযায়ী আমাদের ঋণটি পুন:তফসিল করার আবেদন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাওরান বাজার শাখা আমাদের আবেদনপত্রটি বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করেন নাই। এমনকি এককালীন পরিশোধ করার জন্য উক্ত ব্যাংকে আবেদন করার পরেও ব্যাকের অসহযোগিতার কারণে উক্ত ঋণটি পুন:তফসিল বা এককালীন পরিশোধ করার সুযোগ হয়নি। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পাওনা টাকা আদায়ের জন্য প্রয়োজনে অর্থ ঋণ আদালত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের সুযোগ থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে কোম্পানির চেয়ারম্যান,ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকগণের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলাটি দাখিল করেন।
কেয়া গ্রুপে নিয়োজিত ১০ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডারগণ উক্ত কার্যকলাপের জন্য তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এছাড়া উক্ত বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সু-বিচার প্রার্থনা করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, দায়ের করা এই মামলায় অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন চেয়ারম্যান খালেদা পারভীন ও পরিচালক মাসুম পাঠান। কেয়া ইয়ার্নের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় চৌধুরী। শুনানীতে এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখা হতে তুলা আমদানী করার জন্য এলসি ওপেন করেন। আজ অবধি কৃষি ব্যাংক থেকে ইয়ার্ন এর বিপক্ষে অর্থ আত্মসাৎয়ের অভিযোগ দায়ের করেনি এবং যেহেতু বিষয়টি ব্যাংক ঋণের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাই বিষয়টির সাথে দুদকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুনানীতে দুদকের পক্ষের আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞ আদালত বিস্তারিত শুনানী শেষে জামিন মঞ্জুর করেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা