রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে- অং সান সুকি
শেয়ারবাজার ডেস্ক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া যে কোনো সময়েই শুরু করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির নেত্রী অং সান সুকি।
তবে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, যে কোনো সময়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করার মানে এই নয় যে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হয়ে যাবে।
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে দীর্ঘ সময় চুপ থাকার পর মঙ্গলবার এ বিষয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচি।
এর একদিন পর বুধবার জাপানের নিকি এশিয়ান রিভিউ পত্রিকাকে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলেন তিনি।
শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সুচি বলেন, ফিরিয়ে নেয়ার কাজ আমরা যে কোনো সময়ে শুরু করতে পারি। কারণ এটি নতুন কিছু নয়। এর আগে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সরকার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়েছিল। কাজেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয় এবং বাংলাদেশ সরকারও এ ব্যাপারে একমত রয়েছে।
শরণার্থীদের ফেরতের প্রক্রিয়ার দিনক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া যে কোনো মুহূর্তেই শুরু হতে পারে। আর কখন শুরু হবে তা বাংলাদেশ সরকার এবং আমাদের ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশ যতক্ষণ আগ্রহী না হবে, ততক্ষণ আমরা কোনো প্রক্রিয়া শুরু করব না।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গা অধিকারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা। এরপর থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের লক্ষ্য করে সেনা অভিযানের নামে হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা। শরণার্থীদের আগমন এখনো অব্যাহত রয়েছে।
তবে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সুচি দাবি করেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রাখাইনে অভিযান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এরপরও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আগমন অব্যাহত রয়েছে এবং রোহিঙ্গা গ্রামে অগ্নিসংযোগ চলছে।
সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুচি বলেন, কেন শরণার্থীদের পালানো এবং অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে তার কারণ জানতে সরকারকে এর প্রেক্ষাপট জানতে হবে। বিপুল রোহিঙ্গা শরণার্থী কেন আসছে, তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে মিয়ানমার সরকার।
সুচি বলেন, আমরা আসলেই জানতে চাই। কারণ গত কয়েক সপ্তাহে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ চলে গেছে। সেনা অভিযান ৫ সেপ্টেম্বর থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তাই আমি বিস্মিত হচ্ছি যে, এরপরও কেন মানুষ চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, হতে পারে যে তারা প্রতিশোধের শিকার হওয়ার ভয় পাচ্ছে-এটি একটি কারণ হতে পারে। আমি সত্যিই জানতে আগ্রহী। কারণ আমরা এ পরিস্থিতির প্রতিকার করতে চাই, আমাদের জানতে হবে কেন এবং সর্বপ্রথম কীভাবে সব সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিল।
এই সেনা অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিয়েছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
এসব বিষয়ে তিনি বলেন, যদি আপনি আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কাজ করতে চান, তা হলে আপনার কাছে যথাযথ প্রমাণ থাকতে হবে, গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থাকতে হবে; শুধু গুজবের ওপর নির্ভর করলে হবে না বা কোনো কিছুকে প্রমাণ মনে করলেই হবে না। এসব প্রমাণকে আদালতেও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের অভিযোগ, সুচি সেনাবাহিনীকে জাতিগত নিধন অভিযানে সমর্থন দিচ্ছেন। অভিযান নিয়ে তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণেও মিথ্যাচার করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সুচি বলেন, আসলে কোনো কিছুই অবাক করার মতো নয়। কারণ মতামত পরিবর্তিত হয়, অন্য সব মতামতের মতোই বিশ্ব মতামতও বদলে যায়।
এশীয় ও পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের বিষয়ে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব দেশ নিজেরা সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে দিন পার করেছে, তারা সেসব দেশের চেয়ে ভালো বুঝতে পারে; যারা কখনোই এমন প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়নি।
রোহিঙ্গা সংকট ঘিরে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে মিয়ানমার আরও বেশি চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে কিনা জানতে চাইলে সুচি বলেন, আমরা বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব।
এদিকে সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে মিয়ানমার সরকার গঠিত কমিশন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি ও অন্যদের মতোই অধিকার প্রদানসহ যেসব সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়ন নিয়ে গড়িমসির ইঙ্গিত দিয়েছেন সুচি।
তিনি বলেন,এটি খুবই ভালো এবং প্রশংসাযোগ্য একটি প্রতিবেদন। কফি আনান যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ ও ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিবেদনের কিছু তথ্য পুরোপুরিই সঠিক নয়, তা আমরা চিহ্নিত করেছি এবং কমিশন কিছু তথ্য সংশোধনের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
এদিকে রাখাইনে সহিংসতার কারণে সৃষ্ট সংকট মিয়ানমারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন অং সান সুচি।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। দারিদ্র্য দূর করতে এ ধরনের আর্থিক সংস্কার প্রয়োজন। দারিদ্র্যের কারণেই চরমপন্থার সৃষ্টি হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা