স্থায়ীত্বের খবর নেই ৮৫ কোম্পানির
রুহান আহমেদ: কোম্পানির ঋণমান যাচাই করার পদ্ধতি ‘ক্রেডিট রেটিংয়ে’র দিকে নজর নেই পুঁজিবাজারের অধিকাংশ কোম্পানিরই। ফলে কোম্পানির স্থায়ীত্ব কতটা রয়েছে তা না জেনেই বিনিয়োগ করতে হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। আর সব কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং থাকতে হবে এমন কোনো বাধ্য-বাধ্যকতা নিয়ন্ত্রক সংস্থার না থাকায় কোম্পানিগুলোও সহজে নিজেদের আর্থিক দুর্বলতা প্রকাশ করতে চাচ্ছে না।
জানা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে থাকা তথ্য মতে বাজারে তালিকাভুক্ত ৮৫টি কোম্পানির ক্রেডিট রেটিংয়ের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আর ৭টি কোম্পানির সর্বশেষ ক্রেডিট রেটিং করানো হয়েছে তিন বছর আগে ২০১২ সালে।
অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থের নিরাপত্তা দিতে যে ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান যাচাইয়ের ব্যবস্থা- তা বাধ্যতামূলক করছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিকই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের জন্য ক্রেডিট রেটিং বাধ্যতামূলক করেছে।
উল্লেখ্য, কোনো কোম্পানির ব্যাংকঋণ পরিশোধ সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্রেডিট রেটিং নামক ঋণমান সনদ প্রস্তুত করা হয়। বিধি অনুযায়ী শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বা ব্যাংকঋণের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ঋণমান প্রতিবেদন প্রয়োজন হয়। এর বাইরে ভালো মৌলভত্তিরি অনেক কোম্পানিও তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থান বুঝতে ক্রেডিট রেটিংয়ের সাহায্য নেয়। এছাড়া বাজারে কোনো বন্ড ছাড়ার সময় ইস্যুয়ার বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে ক্রেডিট রেটিং করে থাকে। কিন্তু চাহিদা ও অর্থনীতির আকারের তুলনায় ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি বেশি থাকায় আয় বাড়ানোর কদর্য প্রতিযোগিতার কারণে ঋণমান নির্ধারণে আপস করার অভিযোগ আছে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত ক্রেডিট রেটিং করার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে কোন বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়নি। তবে আইপিও, রাইট ইস্যু এবং প্রিমিয়াম আবেদনের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে ক্রেডিট রেটিং রিপোর্ট কমিশনের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে দাখিল করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে ব্যাংকগুলো নিয়মিত প্রতিবছর ক্রেডিট রেটিং করে। কিন্তু অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা নিয়মিত ক্রেডিট রেটিং করে না।
ক্রেডিট রেটিং এর সাথে বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, কোম্পানির দায় পরিশোধের সক্ষমতা ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নিরুপন করা হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানির স্থায়িত্ব সম্পর্কেও ধারণা লাভ করা যায়। আর এ ধারণা থেকেই কোম্পানির স্থায়িত্ব এবং দায় পরিশোধের সক্ষমতা জেনে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন।
এ বিষয়ে বিএসইসি’র পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ক্রেডিট রেটিং নিয়ে আমাদের অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু জনবলের অপর্যাপ্ততায় এ কাজগুলো হচ্ছে না। তবে বিষয়টির ব্যাপক গুরুত্বের কারণে আমরা এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ক্রেডিট রেটিং পরিদর্শন ম্যানুয়ালের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলোতে পরিদর্শন এবং তাদেরকে স্বচ্ছ জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য আমরা পরিদর্শন ম্যানুয়াল প্রস্তুতের কাজে হাত দিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে কাজটি এখনো সম্পন্ন হয়নি।
এখন পর্যন্ত নিয়মিত ক্রেডিট রেটিং না করানো কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আল-হাজ্জ টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আরামিট লিমিটেড, এটলাস বাংলাদেশ, আজিজ পাইপস, বঙ্গজ, বিডি অটোকার, বিডি সার্ভিসেস, বীচ হ্যাচারি, বার্জার পেইন্টস, বিএসসি, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল্ কোম্পানি, সিএমসি কামাল, সিভিও পেট্রোক্যামিকাল, ঢাকা ডায়িং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডেসকো, দেশ গার্মেন্টস, দুলামিয়া কটন, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, ইস্টার্ন কেবল, ফার কেমিক্যাল, ফারইস্ট লাইফ, ফাইন ফুডস, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, গ্ল্যাস্কো-স্মিথক্লাইন, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, হামিদ ফেব্রিকস, হা-ওয়েল টেক্সটাইল, ইবনে-সিনা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ইমাম বাটন, ইনটেক অনলাইন, ইনফর্মেশন সার্ভিসেস লিমিটেড, যমুনা অয়েল, জুট স্পিনার্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট, লিনডে বিডি, ম্যাকসন্স স্পিনিং, ম্যারিকো, মেঘনা কনডেন্সন্ড মিল্ক, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা পিইটি, মাইডাস ফাইন্যান্স, মিথুন নিটিং, মবিল-যমুনা, মডার্ন ডায়িং, মুন্নু জুট স্টাফলার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নর্দান জুট, ন্যাশনাল টি, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা লা্ইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা অয়েল, পেনিনিসুলা চিটাগাং, পাওয়ার গ্রিড, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রহিমা ফুড, আরএকে সিরামিক, আরডি ফুড, রেকিট বেনকিজার, আরএন স্পিনিং, স্যালভো কেমিক্যাল, সমতা লেদার, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, শ্যামপুর সুগার মিলস, সিঙ্গার বিডি, সোনালী আঁশ, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার, স্টাইল ক্রাফট, তাল্লু স্পিনিং, তিতাস গ্যাস, তোসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, তুং-হাই নিটিং, ইউনাইটেড লিজিং, উসমানিয়া গ্লাস, ওয়াটা কেমিক্যাল এবং জিল বাংলা সুগার মিলস্।
শেয়ারবাজানিউজ/ওহসি/আহাতু