আজ: বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ইং, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ মে ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

ব্যাংকের ডিভিডেন্ড কমার নেপথ্যে

bankশেয়ারবাজার রিপোর্ট : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের দিনের পর দিন কম ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণও কমছে। অন্যদিকে এসব কোম্পানির শেয়ার দর এমন পর্যায়ে নেমে আসছে যে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থায় দ্বৈত করের চাপ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, অন্য খাতের কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ৫ শতাংশ কর রেয়াতের সুবিধা পেলেও ব্যাংক কোম্পানিগুলো তা পায় না। আর ব্যাংকের ব্যবসা মূলত ঋণ প্রদান হওয়াতে কোম্পানিগুলোর নিজস্ব কোনো পণ্য নেই। এর মধ্যে ব্যাড লোন (খারাপ ঋণ) এর চাপও কোম্পানিগুলোকে নিতে হচ্ছে। একদিকে খারাপ ঋণের টাকা যেমন ব্যাংকগুলোকে ওঠাতে চাপে থাকতে হচ্ছে । অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি ঋণের সমপরিমান টাকা সঞ্চিতি (প্রভিশনিং) হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। আর সঞ্চিতির টাকা ব্যাংকগুলোর লাভের মধ্য থেকে না আসলেও এর ওপর দিতে হচ্ছে কর্পোরেট ট্যাক্সের সমপরিমান অর্থ।

আর এই সঞ্চিতির বিপরীতে নির্ধারিত কর নিয়েই গোল বেঁধেছে। ব্যাংকগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমান ঋণ খারাপ হয়ে যায়। আর এর বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করার পর কর দিতে গিয়ে দেখা যায়, মূলধণ থেকে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আমানতের টাকা থেকে কর দিতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের ডিভিডেন্ডে। আর একারনেই বাজারের ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে। ৯টি কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া ফেসভ্যালুর আশে পাশেই আছে আরো বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর। যা যে কোনো সময় ফেসভ্যালুর নিচে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তেমন কোনো সাড়া মেলেনি। আগের বছরগুলোতে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে বাজেট পূর্ব আলোচনায় এসব দাবি তুললেও কোনো সাড়া মেলেনি। এ বছরও বাজেট আলোচনায় বিএবি’র দাবিগুলোর মধ্য অন্যতম দাবি হিসেবে দ্বৈত কর রেয়াতের বিষয়টি থাকছে।

এদিকে পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো আগের বছরগুলোতে যেকোনো খাতের কোম্পানিগুলোর তুলনায় শক্ত অবস্থানে থাকলেও বিগত দুই বছরে মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবারের লেনদেন শেষে দেখা যায়, ৩০ টি কোম্পানির মধ্যে ৯টি কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালুরও নীচে চলে এসেছে। এর মূল কারন ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ড এর পরিমান কমে যাওয়া বলে মনে করছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটে ব্যাংকের ব্যবসা বৃদ্ধি যেমন সম্ভব হয়নি। তেমনিভাবে এসময়ে যাদের ঋণের বকেয়া ছিলো তাদের অধিকাংশই বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি। এর মধ্যে পরিবহন খাত ও পণ্য উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলো পড়েছে ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে। আর তাই ব্যাংকগুলোও থাকছে নিরুপায়।

ব্যাংক কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবস্থা আরো ভয়াবহ হতে পারে। অনেক কোম্পানিই হয়তো এই সঙ্কটের বলি হয়ে সামনের অর্থবছরে লোকসানে চলে যেতে পারে। আর বাকি ব্যাংকগুলোর মুনাফাও কমে আসবে। যার প্রভাবে শেয়ার দর হারাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক কোম্পানিই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মুহাম্মাদ নাদিম শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘সঞ্চিতি সংরক্ষণের ওপর কর রেয়াত না করা হলে অনেক কোম্পানিই আগামী বছরগুলোতে হয়তোবা লোকসানে চলে যেতে পারে। সরকারের উচিত দ্বৈত কর নিয়ে আরেকবার নতুন করে চিন্তা করা। কারন ব্যাংক কোম্পানিগুলো এমনিতেই সরকারি কোষাগারে বড় অঙ্কের কর দিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে চাপে ফেলে কর নিলে পরে হয়তো এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি কোনো খারাপ ফল নিয়ে আসতে পারে। পরবর্তি সময়ে কোম্পানিগুলোর অবস্থা খারাপ হলে সরকারেরই কর আদায় কমে যেতে পারে। এর বিপরীতে কর ব্যবস্থা শিথিল করে কোম্পানিগুলোকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া উচিত।’

 

শেয়ারবাজারনিউজ/ও/সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.