উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ:কে গড়বে ইতিহাস
শেয়ারবাজার রিপোর্ট‘: ট্রেবল জয়’ শব্দ দুটি বিশ্ব ফুটবলে কয়েক দিন থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা আর ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসের মধ্যে এক হাইভোল্টেজ লড়াই দেখার অপেক্ষায় পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মূল লড়াইয়ে নামার আগে দুই দলের জন্যই থাকছে এই ‘ট্রেবল জয়’র সুযোগ।
ঘরোয়া লিগে ডাবলস জেতা দল দুটির মধ্যে যারাই জিতবে ঢুকে যাবে ইতিহাসের পাতায়। লুইস এনরিকের বার্সা যদি শিরোপা নিজেদের করে নিতে পারে তবে, স্প্যানিশ ক্লাবটি দুইবার ট্রেবল জয়ের ইতিহাস গড়বে। আর জুভিরা জিততে পারলে ট্রেবল জয়ের প্রথম কীর্তি গড়বে।
শনিবার জার্মানির বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে একটায় শুরু হবে ইউরোপ সেরার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি।
এ ম্যাচের আগে আরও একটি বাক্য ঘুরেফিরে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সেটি হলো, বার্সার ভয়ঙ্কর আক্রমণত্রয়ীর সঙ্গে জুভিদের অদম্য রক্ষণভাগ। মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের নিয়ে গড়া বিশ্বসেরা আক্রমণভাগের সঙ্গে লড়াইটা হবে মূলত জুভিদের রক্ষণের। কাতালানদের ‘তিন দানব’ যেমন প্রতিপক্ষের রক্ষণকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারে, তেমনি বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারদের রুখে দেওয়ার ক্ষমতায় পারদর্শী ইতালিয়ান ক্লাবটি। মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ এ মৌসুমে একসঙ্গে জ্বলে উঠে গোল করেছেন ১২০টি। অন্যদিকে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে রুখে দেওয়া জুভিরা রয়েছে দারুণ ছন্দে।
এর আগে ২০০৯ সালে পেপ গার্দিওলার অধীনে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিল কাতালান ক্লাবটি। চারবার ইউরোপ সেরার মুকুট পড়ে বার্সা। সদ্য শেষ হওয়া লা লিগায় শেষ ১৪ ম্যাচে অপরাজিত থেকে শিরোপা ঘরে তোলে লুইস এনরিকের দল। কোপা দেল রে’তে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় মেসি বাহিনী।
দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে মেসি এ মৌসুমে করেছেন ৫৮টি গোল। সতীর্থদের দিয়ে আরও ২৭টি গোল করিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর। নিজের দ্বিতীয় মৌসুমেই নামের প্রতি সুবিচার করে একের পর এক ম্যাচে গোল করে চলেছেন ব্রাজিল অধিনায়ক নেইমার। আর নিজের প্রথম মৌসুমেই জাত চিনিয়েছেন লিভারপুলের সাবেক তারকা উরুগুয়ের সুয়ারেজ।
বার্সার আক্রমণত্রয়ী যতই ভয়ঙ্কর সুন্দর হোক না কেন, তাদের রুখে দেওয়ার সামর্থ্য আছে জুভিদের। এ মৌসুমে ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে লিগ শিরোপা ঘরে তোলে ম্যাসিমিলিয়ানো আল্লেগ্রির শিষ্যরা। গোলের মধ্যেই রয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজ। এছাড়া দারুণ ছন্দে থাকা আলভারো মোরাতা, পল পগবা, ভিদাল একসঙ্গে জ্বলে উঠলে বার্সার জয় মোটেই সহজ হবে না। জুভিদের দলে রয়েছে গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী বুফন। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক বুফন জুভিদের গোলবার আগলে রাখবেন নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।
বার্সা এ মৌসুমের শেষ পাঁচ ম্যাচের একটিতে হারলেও সমান ম্যাচে কোনো হারের স্বাদ নেয়নি জুভিরা। সাতবার ফাইনালে উঠলেও ইতালিয়ান জায়ান্টরা দুইবার শিরোপা ঘরে তোলে। আর ১৯৭৩, ১৯৮৩, ১৯৯৭, ১৯৯৮ ও ২০০৩ সালে ফাইনালে হারে ইতালির ক্লাবটি। এবারই প্রথম আসরের ইতিহাসে জুন মাসে ফাইনালটি হতে চলেছে।
শেষবার ২০০৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হয়েছিল দুই দলের। বার্সার জাভি ও জুভিদের বুফন দুই দলের খেলোয়াড় হিসেবে ফের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। মজার তথ্য হলো কাতালুনিয়া দলটির বর্তমান কোচ লুইস এনরিকও ২০০৩ সালের সে ম্যাচটিতে অংশ নেন। সেবার দুই লেগ মিলিয়ে বার্সাকে ৩-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল জুভেন্টাস। প্রথম লেগে ১-১ এ ড্র করে ফিরতি লেগে বার্সাকে ২-১ এ হারায় জুভিরা।
পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, বার্লিনের মঞ্চে শেষ হাসিটা হাসবে কে তা জানতে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। লড়াইটা যে সমানে সমান হবে তা বলাই যায়।