জলবায়ুর পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে বিশ্ব
শাহ আলম নূর : সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন। বিষয়টি এখন শুধু আলোচনার টেবিলেই সীমাবদ্ধ নেই, এটা এখন ছাড়িয়ে পড়েছে মাঠ-পর্যায়ে আন্দোলনের মতো।
জলবায়ু হচ্ছে কোনো অঞ্চলের আবহাওয়া বা বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহের দীর্ঘদিনের (কমপক্ষে ৩০ বছরের) গড়। জলবায়ু পরিবর্তন বলতে ৩০ বছর বা তার বেশি সময়ে কোনো জায়গার গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন বুঝায়। একটি নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা বা বৃষ্টিপাতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে বোঝায়।
কোনো জায়গার গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন যার ব্যাপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক শত বছর পর্যন্ত হতে পারে সেটাই জলবায়ু পরিবর্তন (ইংরেজি: Climate change) বলা হয়।
অনেকগুলো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর জলবায়ুর পরিবর্তন নির্ভর করে। যে সমস্ত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় জলবায়ুর পরিবর্তন হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা, পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক-পরিবর্তন কিংবা সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান।
বর্তমান সময়ে মনুষ্যজনিত গ্রিনহাউজ গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ ধরা হয়। যেটি কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিরতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে।
বিশেষ কোনো অঞ্চল বা জনগোষ্ঠী নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়েছে সারাবিশ্বের মানুষ। এটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, এর প্রভাব শুধু অনুন্নত দেশগুলো ভোগ করবে। বিশেষ করে গত ২০ বছরে এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিক মহাদেশেও।
বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচকের (সিআরআই) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গেল ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলে মারা গেছে ৫ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর এর সরাসরি ফলাফল হিসেবে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি। অতিখরা, অতিবৃষ্টি, প্রলয়ঙ্করী ঝড়, তীব্র শীত, অসহনীয় তাপপ্রবাহ, করাল বন্যা ও ভূমিধস আমাদের জানিয়ে দেয় জলবায়ু পরিবর্তন এক কঠিন বাস্তবতা, এক মূর্তিমান চ্যালেঞ্জ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হলে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস লাগবেই লাগবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষকে সজাগ ও সচেতন করতে হবে। কলকারখানায় কালো ধোঁয়া নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। সিএফসি নির্গত হয়- এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে।
বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করতে হবে এবং বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন বাড়াতে হবে। সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সন্ধান করতে হবে। প্রকৃতির ওপর মানুষের বিরূপ আচরণ বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দেশের সরকার ব্যাপক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠন করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচলনা করছে।
পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবন ও অর্থায়নের যুগে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে যা সম্মিলিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ।